সেলুলার জেল ( Cellular Jail )

Immortal Gallerys
0

 সেলুলার জেল

( Cellular Jail )


আন্দামান ভ্রমণের অন্যতম দর্শনীয় স্থান পোর্ট ব্লেয়ারের সেলুলার জেল। বর্তমানে এটি ভারতের অন্যতম জাতীয় স্মারকসৌধ। প্রায় সকল পর্যটকই ঘুরে দেখেন সাগর পাড়ের সেলুলার জেল। তবে বর্তমানে এই জেল দর্শনীয় হলেও সেলুলার জেলের ইতিহাসটা বড়োই করুণ। অতীতটা বড়ো বেদনাদায়ক। সাগর পাড়ের এই জেলের সাথে জড়িয়ে রয়েছে ব্রিটিশদের অমানবিক অত্যাচারের অজস্র কাহিনী। আজও জেলের প্রকোষ্ঠগুলোয় ঢুকলে শিউরে ওঠে গা। আন্দামান সফরের প্রথম দিনেই সেলুলার জেল দর্শনে গেলাম। শনিবারের বারবেলায় সূর্য তখন সুনীল সাগরের কোলে পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়ছে। জেলের বামদিকে থাকা টিকিট কাউন্টার থেকে টিকিট কেটে (টিকিট মূল্য: ৩০ টাকা/- জনপ্রতি) সেলুলার জেলে প্রবেশ করলাম। প্রথমেই জেলের প্রবেশপথের বাম ও ডান দিকে থাকা মিউজিয়াম ঘুরে দেখা। চাইলে গাইডও নেওয়া যায়। যিনি জেলের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখানোর পাশাপাশি হিন্দি ও ইংরেজিতে ইতিহাস বুঝিয়ে দেবেন। বিভিন্ন মিউজিয়ামে জেল সম্পর্কিত নানা তথ্য সংরক্ষিত রয়েছে তেমনই এখানে রয়েছে জেলের নকশা সহ বিভিন্ন স্মৃতি। মিউজিয়ামের পাশাপাশি একে একে স্মারকসৌধ, ফাঁসিমঞ্চ, জেল প্রকোষ্ঠ দেখার পালা। উনবিংশ শতাব্দীর অন্তিম লগ্নে দেশজুড়ে জোরকদমে চলছে স্বাধীনতা আন্দোলন। আন্দোলন দমনে ও সশস্ত্র বিপ্লবের মূলে কুঠারাঘাত করতে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের আন্দামানে দ্বীপান্তরে পাঠানোর শাস্তি বেছে নিয়েছিল ব্রিটিশরা। ব্রিটিশ সরকার বুঝল আন্দামানে একটি কারাগার প্রয়োজন। সেই মোতাবেক ১৮৯৬ সালে সাগরপাড়ে শুরু হল কারাগার তৈরির কাজ। শেষ হয় ১৯০৬ সালে। তৎকালীন বর্মা থেকে ঘন লাল রঙের ইট এনে প্রথমে তৈরি হয়েছিল কারাগার। কারাগার ভবনের সাতটি শাখা ছিল। কেন্দ্রে ছিল টাওয়ার। যেখান থেকে রক্ষীরা সারা জেল চত্বরে নজরদারি চালাতেন। কারাগারে মোট ৬৯৬ টি সেল রয়েছে। ১৪.৮ x ৮.৯ ফিটের প্রকোষ্ঠগুলিতে একটি মাত্র ঘুলঘুলি। সেটাও মেঝে থেকে ৯.৮ ফিট উচ্চতায়। প্রকোষ্ঠগুলি এমন ভাবে বানানো হয়েছিল যাতে কোনো বন্দি অন্য কোনো বন্দির মুখ দেখতে না পান। ফলে তাঁদের মধ্যে যোগাযোগের কোনও উপায় ছিল না। পাশাপাশি, জেলেরে লকগুলোও ছিল সম্পূর্ণ অন্য রকমের। এ ভাবেই 'সলিটারি কনফাইনমেন্ট'-এর ব্যবস্থা করেছিল ব্রিটিশ সরকার। সেলুলার জেলে ঠাঁই হয়েছিল অজস্র স্বাধীনতা সংগ্রামীর, যাদের মধ্যে বাঙালিদের সংখ্যাটাও নেহাত কম ছিলনা। একদিকে ব্রিটিশদের নারকীয় অত্যাচার, অন্যদিকে একের পর স্বাধীনতা সংগ্রামীকে ঝোলানো হয়েছিল সেলুলার জেলের ফাঁসির দড়িতে। সেই ফাঁসিঘর, দড়ি আজও অক্ষত। সেই সমস্ত অত্যাচারের করুণ স্মৃতি বয়ে নিয়ে চলেছে সেলুলার জেলের প্রতিটা প্রকোষ্ঠ। সুবিশাল এলাকা জুড়ে অবস্থান করা সেলুলার জেল পুরোটা ঘুরে দেখতে ঘন্টার পর ঘন্টা কেটে যাবে। হাতে খুব একটা বেশি সময় না থাকায় বেশ কিছু সেল ঘুরে দেখার পর সিঁড়ি বেয়ে সোজা পৌঁছে গেলাম জেলের ছাদের টাওয়ারে। এই টাওয়ার থেকে পুরো জেল যেমন দেখা যায়, তেমনই অনতিদূরে থাকা সুনীল সাগরের অনির্বচনীয় রূপ দেখা যায়। এসব দেখতে দেখতেই কেটে গেল বেশ কিছুটা সময়। পর্যটকদের মনোরঞ্জনে জেল চত্বরে নানা রঙবেরঙের গাছ লাগানো রয়েছে। তবে পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ সেলুলার জেলের লাইট এন্ড সাউন্ড শো বেশ কিছুদিন ধরে বন্ধ থাকায় তা আর দেখা হলনা। পোর্ট ব্লেয়ার শহরেই সেলুলার জেল। ভাড়া গাড়ির পাশাপাশি অটো বা পাব্লিক বাসেও খুব সহজেই সেলুলার জেলে আসা যায়। সেলুলার জেল যেমন অজস্র কালো অধ্যায়কে স্মৃতি হিসাবে বয়ে নিয়ে চলেছে, তেমনই এই জেলে বসেই স্বাধীনতা সংগ্রামের স্বপ্নে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়েছিলেন ভারতমাতার অজস্র বীর সন্তান। তাঁদের প্রত্যেকের আত্মত্যাগ, সাহসিকতা, অদম্য লড়াকু মানসিকতা আর দেশপ্রেমই এনেছিল স্বাধীনতা। 


সেলুলার জেল ( Cellular Jail )
আন্দামানের সেলুলার জেল

সেলুলার জেল ( Cellular Jail )
ভারতের অন্যতম জাতীয় স্মৃতিসৌধ – সেলুলার জেল

সেলুলার জেল ( Cellular Jail )
জেলের অন্দরে ...

সেলুলার জেল ( Cellular Jail )
সেলুলার জেল , বর্তমানে দেশের অন্যতম জাতীয় স্মৃতি সৌধ 🇮🇳

সেলুলার জেল ( Cellular Jail )
সেলুলার জেল

সেলুলার জেল ( Cellular Jail )
জেল প্রকোষ্ঠ

সেলুলার জেল ( Cellular Jail )
ফাঁসিঘর ও ফাঁসির দড়ি – এই দড়িতেই দেশ মাতৃকাকে স্বাধীন করার স্বপ্নে প্রাণ দিয়েছিলেন অজস্র বীর সন্তান🙏🇮🇳

সেলুলার জেল ( Cellular Jail )
ওয়াচ টাওয়ার , একদিকে সুনীল সমুদ্র , অন্যদিকে বদ্ধ জেল

সেলুলার জেল ( Cellular Jail )
সেলুলার জেলের প্রতিটি প্রান্তে জড়িয়ে অজস্র ইতিহাস

সেলুলার জেল ( Cellular Jail )
জেলের মিউজিয়ামে থাকা জেলের নকশা


ফটো : পৃথিশরাজ কুন্তী

স্টোরি ইনফরমেশন : পৃথিশরাজ কুন্তী




Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)
To Top