সংসার সুখের হয় রমণীর গুনে ( Bangla Story )

Immortal Gallerys
1

 সংসার সুখের হয় রমণীর গুনে

স্বামীর ধারণা শুয়ে বসে থাকি সারাদিন আর এই কথা আমায় সারাদিন খোঁচা মেরে যেত।
তার কথা না সয্য করতে পারি, না কিছু বলতে পারি। আজ সকাল বেলার কথা, তাকে বললাম অফিস থেকে আসার সময় বাজার নিয়ে এসো। সে মুখে পরটা গুজে চিবুতে চিবুতে বললো,
" রেহানা সারা দিন তো ঘরে সুয়ে বসে থাকো, তুমিই না হয় নিয়ে এসো। "

বলেই টাকার নোট রেখে চলে গেলো। আমি খানিকটা স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। অতঃপর নিজের কাজে মন দিলাম। স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলে তো চলবে না। আমি সব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলে তো আর ঘরের কাজ হবে না, বাজার করা হবে না, আর রান্নাও হবে না।

দুপুর বারোটা টা নাগাদ শামিমের কল এলো, এই সময় টায় শামিম খুব একটা কল দেয় না। তাড়া হুড়ো করে কল টা রিসিভ করতেই শামিম ওপাশ থেকে বললো,
" হ্যাঁলো! রেহানা।"

" হ্যাঁ বলো! "

" তুমি আজ দারোয়ান চাচার কাছে টিফিন পাঠিও না। আশরাফুল ভাই কে তো চেনো? "

" হুম চিনেছি, তোমার কলিগ আশরাফুল ভাই!"

" হ্যাঁ ওনার এনিভার্সারি লাঞ্চ ট্রিট দিচ্ছেন উনি! "

" বাহ ভালো কথা। কিছুদিন পর আমাদের এনিভার্সারি মনে আছে তো? "

" হুম মনে আছে। তুমি আজকে টিফিন পাঠিও না! "

" আগে বলবানা, রান্না করা আমার অলমোস্ট শেষ। "

শামিম তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বললো, " রান্না করা কি আর ব্যাপার! "

শামিমের তাচ্ছিল্যের হাসি আমার কানে বিন বিন করে বাজছে। আমি ফোনটা কেটে দিয়ে, রান্নায় মনো যোগ দিলাম। এই কাঠ ফাটা গরমে আমি তার জন্য রান্না করলাম, সে এভাবে তাচ্ছিল্যের স্বরে না-ও বলতে পারতো। আমি তো ওর স্ত্রী একটু প্রশংসা কি আমি ডিজার্ভ করি না।
রাতে শামিমের পছন্দের হাঁসের মাংস ভুনা করলাম, সাথে ডাল চরচরি। দ্রুত রান্না সেরে রুমে এসে দেখি সে কাপর চেঞ্জ করে ক্লান্ত হয়ে শুয়ে আছে। তার ক্লান্ত মুখ দেখে বড় মায়া হলো। খাবার টেবিলে তাকে আর ডাক দিলাম না। খাবার নিয়ে রুমে চলে এলাম, সে খেয়েই যাচ্ছে, আমি খানিক পর পর তার দিকে তাকাচ্ছি এই বুঝি সে একটু প্রশংসা করবে, বলবে..."রেহানা মাংসটা দারুণ হয়েছে। "

আমার আশায় সেগুরে বালি, আমি নিজেই তাকে প্রশ্ন করলাম " মাংস টা কেমন হয়েছে? "

সে ব্যাস্ত ভংগিমায় বললো, " যেমন হয় ঠিকতেমনই হয়েছে। তোমার আর কি কাজ খালি রান্না করো আর খাও। "

তার উত্তরে প্রশন্ন হতে পারলাম না, বারং মনে হচ্ছে কেনো তাকে প্রশ্ন করতে গেলাম। এবার চুপ করে থাকতে পারলাম না, তাকে প্রতি উত্তরে বললাম,
" তোমার কি মনে হয়, রান্না আর খাওয়া ছাড়া আমারা গৃহিণীদের আর কোন কাজ নেই? "

শামিম হাঁসের গোস্ত চিবুতে চিবুতে বললো, " আর কি কাজ আছে নাকি তোমাদের। "

আমি চুপ করে হাত ধুয়ে উঠে গেলাম। এখন তর্ক করলে, তর্ক বাড়বে। তার চেয়ে ভালো আমি চুপ থাকি একদিন আমারো সময় আসবে সঠিক জবাব দেবো৷

>>>>> দিনটা শুক্রবার, কলিং বেল বাজছে, শামিম মোবাইলে ভিডিও গেইম খেলছে, খেলায় সে এতো টাই মগ্ন বসার রুমে বসেও বেল বাজার শব্দ খেয়াল করে নি, আমি রান্না ঘর থেকে বললাম,
" শামিম দরজাটা খুলে দাও, আমি রান্না ঘরে আছি।"

শামিম খানিকটা বিরক্ত হয়ে বললো," সব সময় তো আমি অফিস সামলাই, রান্না ঘর থেকে এসে দরজাটা খুলবে তা ও পারছো না?"


নাস্তা ভাজার মাঝ খানে চুলা অফ করে, আমি গেলাম দরজা খুলতে। শামিমের কলিগ আশরাফুল ভাই এবং একজন ভদ্র মহিলা এসেছেন। ফেইসবুকে ভদ্র মহিলার ছবি দেখেছিলাম ইনি আশরাফুল ভাইয়ের স্ত্রী। আমি সালাম দিয়ে ভেতরে আসতে বললাম, ওনারা বসার রুমে এসে বললেন। শামিম আমাকে নাস্তার ব্যাবস্থা করতে বললো, আমি দ্রুত রান্না ঘরে গেলাম নাস্তা রেডি করতে। ক্ষানিক পরে আশরাফুল ভাইয়ের স্ত্রী রান্না ঘরে এলেন, আমি মুচকি হেসে বললাম,
" আপু আপনি এখানে? "

আশরাফুল ভাইয়ের স্ত্রী হালকা হেসে বললেন, " আমার নাম সুমনা। আপনি আমাকে সুমনা বলে ডাক দেবেন প্লিজ আমি আপনার সমবয়সী। "

" ঠিক আছে বলবো। কিন্তু তুমি আমাকে তুমি করে বললো সুমনা৷ "

সুমনা কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনি বসার রুম থেকে শামিম বললো " রেহানা নাস্তা হলো, আর কতক্ষণ লাগবে?"

" এইতো আসছি। " বলেই ট্রেতে নাস্তা সাজিয়ে বসার রুমে গেলাম, সাথে সুমনা ও এলো। টেবিলে নাস্তা রাখতেই শামিমের কলিগ আশরাফুল ভাই বললেন,
" আর বলবেন না শামিম ভাই আমার বউ ও এমন সারাদিন বাসায় শুয়ে বসে থাকে অথচ কাজের সময় তার যত্তো লেট৷ "

প্রতি উত্তরে শামিম কিছু বললো না, ফিনিক হেসে নাস্তা সার্ভ করলো। সুমনা আমার পাশেই বসে চা খাচ্ছে আমি সুমনার কানে ফিস ফিস করে বললাম,
" গৃহিণী বলে, আশরাফুল ভাই কি তোমাকে পিন মেরে কথা বলে?"

সুমনা ইশারায়, হ্যাঁ বললো৷ আমাদের দিকে তাকিয়ে আশরাফুল ভাই বললেন, " কি ব্যাপার রেহানা ভাবি কি গল্প করছেন? "

শামিম, আশরাফুল ভাইয়ের সাথে তাল মিলিয়ে বললো, " গৃহিণীদের আর কি গল্প সব তো সংসার নিয়েই। " বলেই দু'জনেই হো হো করে হেসে দিলো। কি অদ্ভুত আর অন্য রকম হাসি যেন গৃহিণীরা মানুষই না, কর্মহীন মানুষ মাত্র। ঠিক তখনি সিদ্ধান্ত নিলাম বাড়ি ছেরে কিছু দিনের জন্য ভাইয়ের বাসায় চলে যাবো, শামিমের একটা শিক্ষা দরকার। যেই ভাবা সেই কাজ, পর দিন সকালে না বলে, ঢাকা থেকে গাজীপুর চলে এলাম। ঘুম থেকে উঠে শামিম আমাকে না পেয়ে কল দিলো, কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে শামিম বললো,
" রেহানা সকাল সকাল কোথায় গিয়েছো?"

" গাজীপুর এসেছি, ভাইয়ের বাসায়, ছুটি কাটাতে। "

" ছুটি কাটাতে?"

" হ্যাঁ ছুটি কাটাতে, তুমি যেমন সপ্তাহে এক দিন ছুটি পাও আমি তো পাই না। তাই ভাবলাম কিছু দিন এখানে থাকি। "

" তুমি তো সব সময় বাসায় থাকো ছুটি কিসের?"

" গৃহিণী বলে কি আমি কাজ করি না, কিছু দিন না হয় তুমি একাই থাকো সংসার এবং অফিসের দু দিকের কাজ সামলে দেখো কেমন লাগে! "

শামিম হেসে বললো, " সংসারের কি আর এমন কাজ!" বলেই ফোন টা কেটে দিলো৷ শামিম এখন কি করছে তাই বসে কল্পনা করছি ঠিক এমন সময়ই শামিম আবার কল দিলো, ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে বললো, " রেহানা তৈলের বোতল কোথায় রেখেছো?"

" গ্যাসের চুলার টেবিলের নিচে। "

" পেয়েছি, কিন্তু লবন কোথায়? "

" মসলার ঝুড়িতেই আছে দেখো!"

" হ্যাঁ পেয়েছি এখন রাখি লেইট হচ্ছে। " বলেই শামিম কল টা কেটে দিলো। ক্ষানিকটা পরে সে আবারো কল দিলো, ফোনের ওপাশ থেকে ব্যাস্ত ভঙ্গিতে বললো,

" আমার শার্ট প্যান্ট ইন করো নি?"

আমি চিপস খেতে খেতে বললাম, " আমি এখন ছুটিতে৷"

বলেই কল টা কেটে দিলাম। নয় টা পঞ্চাশ বাজে, শামিম নিশ্চিত শার্ট পেন্ট ইন ছাড়া পরে অফিস চলে গেছে। কল্পনা করতেই হাসি পাচ্ছে। সারা দিনে এক চল্লিশ বার শামিম কল দিয়েছে আমি রিসিভ করি নি, আমি তো এখন ছুটিতে আছি, রাতের বেলা শামিম এক নাগারে কল দিয়েই যাচ্ছে, ঘুম ঘুম চোখে ফোনটা রিসিভ করলাম, শামিম বললো, " মশারী কোথায় রেহানা?"


আমি চোখ বড় বড় করে বললাম রাত এক টা বাজে জিজ্ঞেস করছো মশারী কোথায়? কাঁচা ঘুম টা ভেংগে গেলো আমার। "


" তুমিতো তাও ঘুমাতে পারছো মশার কামড়ের জ্বালায় আমি বিছানায় পিঠ ঠেকাতে পারি নি। "


শামিমের কথা শুনে খুব মায়া হলো, যত শিক্ষা দিতে চাই না কেনো আদার ওয়াইজ সে তো আমার স্বামী, তাকে তো আমি ভালোবাসি।

" আলমারির নিচের তাকে মশাড়ি আছে, আর পাশেই স্প্রে আছে। "


সকালে ঘুম ভাংলো শামিমের ফোন পেয়ে, ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম সকাল এগারো টা বাজে, এই সময় টাতে তো, শামিমের অফিসে ব্যাস্ত থাকার কথা, ফোন টা তাড়াতাড়ি করে রিসিভ করতেই আমি জিজ্ঞেস করলাম " অফিস যাও নি?"


" না সকালে ডিম ভাজতে গিয়ে হাত পুড়ে গেছে। "


" এ মা। বিছানার পাশে মলম রাখা আছে তাড়াতাড়ি লাগিয়ে নাও শামিম। "


শামিম খানিকটা চুপ থেকে বললো, " তুমি নেই, তাই তোমার মর্ম বুঝতে পারছি রেহানা। আজ বুঝতে পারলাম সংসার তোমার গুনের কারনে তোমার অবদান আর পরিশ্রমের কারনেই সুন্দর! তোমার আনুপস্থিতিতেই অনুভব করতে পেরেছি। "


শামিমের কথা শুনে রেহানার গাল বেয়ে চোখের নোনা জল গড়িয়ে পড়লো, " তুমি যেমন অফিসে কাজ করো আমিও বাসায় কাজ করি, তোমার কাপর ধুঁই, ইস্ত্রী করি, রান্না করি ঘর গুছাই বাজার করি। সকাল থেকে ঘুম থেকে ওঠার পর রাতে ঘুমানোর আগে পর্যন্ত কাজ করি। তোমার কাজের টাইম টেবিল আছে, আমার কাজের টাইম টেবিল নেই। তুমি যেমন অফিসে শ্রম দাও, আমিও সংসারের পিছনে শ্রম দেই। পার্থক্য তুমি সপ্তাহে একদিন ছুটি পাও আমি পাই না, মাস শেষে বেতন পাও আমি পাই না। "

বলেই রেহানা কল টা কেটে দিলো। বিকাল চার টা কি সারে চার টা বাজে কলিং বেল বাজছে, রেহানা দরজা খুলতেই দেখলো, শামিম কুচকানো শার্ট, পেন্ট পরেই চলে এসেছে বাম হাতে দুটো আংগুল বেন্ডেজ করা। শামিম ডান হাতে গোলাপ ফুল রেহানার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো, " হ্যাপি মেরেজ এনিভার্সারি "


রেহানা মুচকি হেসে ফুল টা হাতে নিয়ে বললো, " আমি ভেবে ছিলাম তুমি ভুলে গেছো।"


" চার বছর বিবাহিত জীবনে আজ বুঝতে পারলাম সংসার সুখের হয় রমণীর গুনে "





Post a Comment

1Comments
Post a Comment
To Top